মাদারিপুর প্রতিনিধিঃ মাদারিপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর উপর হামলা করতে গিয়ে জনগণের হাতে ধরা খাওয়া জঙ্গী ফাহিমকে বন্দুকযুদ্ধের নাম করে পুলিশ মেরে ফেলেছে। মেরে ফেলার পর আজ শনিবার সকালে ফাহিমের লাশ মাদারিপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
মাদারিপুর পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, তারা নিরূপায় হয়ে ফাহিসমে ক্রসফায়ারে ফেলেছেন। এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা যে একজন পুলিশ সুপার এবং তার নাম যে সারোয়ার হোসেন, এটা প্রতিবেদনে উল্লেখ না করার অনুরোধ করেন। তাই আমরা উল্লেখ করতে পারছি না বলে পাঠকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ফাহিম ১৮ বছর বয়সী জিপিএ ৫ পাওয়া জঙ্গী। সে হিজবুত তাহরীর এর সাথে সম্পৃক্ত। এক বড় ভাই ফাহিমকে এই পথে নিয়ে এসেছে। আর আমরা পুলিশরা ফাহিমকে বেহেশতের পথে নিয়ে গেলাম।
বিচারের আওতায় না এনে ক্রসফায়ারে দেয়ার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ছেলেটি সুন্দরভাবে সব কিছুর জবাব দিয়ে যাচ্ছে। তার নাম, বাপ মায়ের নাম, বয়স কত, প্রেম করে কিনা, বিড়ি খায় কিনা, মাস্টারবেট করে কিনা, সবকিছুর জবাবই সে দিচ্ছে। আমরা নিচ্ছি। খুব ভালো লাগছিলো। তাকে চা অফার করেছি, কিন্তু সে বললো খাবে না। সে চা খায় না। তো, আলাপ চলতে চলতে এক পর্যায়ে জঙ্গী ফাহিম আমাদের খালু, ফুফাদের নাম বলতে শুরু করে। আমরা বলেছি, না, এটা হতে পারে না। এতটুকুন বাচ্চা এত বড় বড় মানুষের নাম কেন জানবে? এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা মেনে নেইনি।”
“তারপর আমরা হিজবুত তাহরীরের সাথে যোগাযোগ করি। বলি, তোমাদের ছেলেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাও, ও বেশি বুঝে। জবাবে বললো তারা ক্লান্ত। এখন ছিনিয়ে নিতে পারবে না। পরে দেখা যাবে। এবার যোগাযোগ করি আনসারুল্লাহ বাংলা টীমের সাথে। আনসারুল্লাহরা বলে ফাহিমকে দিয়ে ফেসবকে আইডি খুলিয়ে ধর্মকে অবজ্ঞা করে একটা স্ট্যাটাস দিতে। তারপর থানার সামনে ৫ মিনিটের জন্য ছেড়ে দিলে তারা ২ মিনিটের মধ্যে কল্লা ফেলে দিবে। কিন্তু আমরা রাজি হইনি। বলেছি চাপাতি দিয়ে কোপানো যাবে না। আর থানার সামনে ছাড়া যাবে না। তাকে গুলি করে মারতে হবে। আনসারুল্লাহ বলেছে গুলি করে মারলে সওয়াব কম। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে তারপর অনেকগুলো গুলি করে দিবে, সমস্যা নেই। আমরা মানা করে দিয়েছি।”
এরপরই কি আপনারা ক্রসফায়ারে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? জিজ্ঞাসা করলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “না, আমরা চেষ্টার কোন ক্রুটি করিনি। সংগঠনগুলোর দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি, ছেলেটার জন্য একটু বেহেশতে ভিক্ষা চেয়েছি। কিন্তু কেউই ফাহিমকে বেহেশতে নিয়ে যেতে রাজি হচ্ছিলো না। তো, আনসারুল্লাহর পর আমরা জেএমবির কাছে যাই। তারা বলে সাঁড়াশি অভিযানে অনেক মুজাহিদ ধরা পড়েছে। এখন অপারেশন চালানোর ইচ্ছে নেই। তাছাড়া এই মালতো তাদের না। হিজবুত তাহরীরের। তাদের মাল তারাই সামলাবে।”
তারমানে এরপরই তাকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দেন, তাই না? “না, তখনো আমাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গেনি। চিরুনি চালিয়ে খবর নিয়েছি ফাহিম কোন মন্ত্রী, এমপি, সচিব, নেতা, উপনেতা’র আত্মীয় কিনা। ভেবেছি সেরকম কিছু হলে জামিন পাইয়ে দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু কানেকশন পেলাম না। তারপর বাধ্য হয়ে ওলামালীগের সাথে যোগাযোগ করি। বলি, চাপাতিসহ দুইটা ওলামা পাঠান, একটা খ্যাপ আছে। তারা বলে রোজার দিন, খ্যাপ মারতে পারবে না। অনেক বুঝাইলাম, রাজি হলো না। বলে পুলিশের ফাঁদে পা দিবে না।”
এবার নিশ্চয় আর দেরি করেননি, একদম দিয়ে দিয়েছেন? “আপনার এত তাড়া কেন? আমাদের ঝামেলা আমাদেরকে মেটাতে দেন। ওলামা লীগ ফিরিয়ে দেয়ার পর শেষ ভরসা হেফাজতের সাথে যোগাযোগ করি। বলি, আপনাদের সোনাবাহিনী থেকে অল্প কয়টি সোনা পাঠান, একটা ফ্রাংকেস্টাইন মেরে যাক। অভিমানের সুরে হেফাজত বলে নতুন যেসব জঙ্গী সংগঠনের সাথে পুলিশের সম্পর্ক হয়েছে, তাদের কাছে যেতে। তারপর হেফাজত চলে যেতে থাকে। পেছন থেকে ডাক দিলে ‘আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না…’ গান থেকে চার লাইন শুনিয়ে দেয়।”
বুঝতে পারছি, এরপরও আপনারা ক্রসফায়ার দেননি। বসে বসে ফাহিমের চেহারা দেখেছেন। “আরে না ভাই। চেহারা দেখার সময় কই। যে জানোয়ার আমাদের খালু, ফুফাদের নাম জানে, তাকেতো বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তাই আবারো যোগাযোগ করি হিজবুত তাহরীরের সাথে। বলি, আমরা ফাহিমকে নিয়ে মিয়ারচরে অভিযানে যাবো। তোমরা ওঁৎপেতে থাকবে। ফাহিম আগে আগে যাবে, আমরা পেছনে। তোমরা ফাহিমকে দু’টি গুলি করবে, আমরা তোমাদের দিকে দু’টি করবো। ফাহিম মরে যাবে, তোমরা চলে যাবে। কিন্তু হিজবুত তাহরীর শুনছিলো না। অনেক চাপাচাপির পর রাজি হলো।”
ওহ মাই গড! তারমানে ওরা নিজেদের জঙ্গী নিজেরা মেরেছে? “না, তা মারবে কেন? আমরা ভোরে মিয়ারচরে গিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত চলে যাওয়ার পরও দেখি কেউ গুলিটুলি করছে না। কোন সাড়াশব্দ নাই। আসলে হিজবুত তাহরীর আসেনি। বেঈমানী করেছে। তো, ফেরার পথে নিরূপায় হয়ে আমরাই গুলি করে দিলাম। আসলে কিছু করার ছিলো না। এখন মনে করেন যে ঝামেলা কমে গেলো। সামান্য জিজ্ঞাসাবাদে সাপ বেরিয়ে এসেছে, পরে দেখা যাবে হাঙ্গর, কুমির, ডাইনোসর সব লাইন ধরে বেরিয়ে আসতেছে। কী দরকার এত রিস্কে যাওয়ার।”
তো, নিজেরা মেরে হিজবুত তাহরীরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন কেন? “আহা! তাদেরইতো মারার কথা ছিলো। অর্থাৎ তারা তাদের জঙ্গীটাকে মারবে বলে কথা দিয়েছিলো। কিন্তু ঘটনাস্থলে আসতে পারেনি, তাই আমরা ফাহিমকে অন বিহাফ অব হিজবুত তাহরীর মেরে দিয়েছি। সেক্ষেত্রে দায় আমরা নিবো কেন?”
সবশেষে এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানালেন এটা একটা সংকেত ছাড়া অন্য কিছু নয়। একজন জঙ্গী জিহাদ করতে গিয়ে পাবলিকের হাতে ধরা খাইতেই পারে, এমনকি সে অনেক গোপন কথাও জানতে পারে, কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে যেন সেসব বলে না দেয়, এ জন্য ফাহিমকে কিলিয়ে অন্যদের বুঝানো হয়েছে।
দেখুন দুর্ধর্ষ সেই ভিডিওঃ