মতামত ও বিশ্লেষন
ছোটবেলায় একটি কবিতা পড়েছিলাম “সড়ক দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার আবুল হাসে।” এ কবিতাটির কথা যতটুকু মনে আছে, তারচেয়ে বেশি মনে পড়ে একটি সিনেমার কথা “মেরামত করবি কিনা বল – Love me or kill me!” আমার সাহিত্যানুভূতি এবং সিনেমানুভূতিতে গভীর দাগ কেটে যাওয়া এ কবিতা এবং সিনেমার প্রসংগ এমনি এমনি আসেনি। দু’দিন ধরে আবুলের জন্য খুব টেনশন হচ্ছে। বলতে পারেন আমার আবুলানুভূতি বেশ জেগে উঠেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত এ যোগাযোগমন্ত্রী তার প্রিয় মন্ত্রনালয় হারাচ্ছেন।
আমার একমাত্র নিজস্ব পুত্রসন্তান ৬ মাসে পা দিয়েছে। খুব মনযোগ দিয়ে দেখলাম ছেলেটা কারণে অকারণে হাসে। মাঝে মাঝে আদর করে মাইর দিলেও হাসে। ধমক দিলেও হাসে। আমি আদর করে তাকে আবুল হোসেন নামে ডাকি। ডাক দিলে কোন কিছু না বুঝেই ছেলেটি হেসে দেয়। আমার ভীষণ আনন্দ। আমার সন্তান আমার আবুল হোসেন । সৈয়দ আবুল হোসেনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের মতো। প্রধানমন্ত্রীর সাথে এ যায়গায় আমার ভীষণ মিল। যতই অন্যায় করুক না কেন, কেউ কি নিজের সন্তানকে ফেলে দিতে পারে? আমার আবুল হোসেন প্রতিদিন কয়েকবার আমার কোলে হিসু করে দেয়, কই সৈয়দ আবুল হোসেনতো একবারও প্রধানমন্ত্রীর কোলে হিসু করে দেয়নি। তবুও আবুল তার মন্ত্রনালয় হারাচ্ছে। এটা বেশ দু:খজনক।
শোনা যাচ্ছে আবুলের মন্ত্রনালয় পাবেন নোয়াখালীর ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালীও আমার খুব প্রিয় যায়গা। বাংলাদেশের প্রতি সেক্টরে একজন করে ‘বিখ্যাত’ খুঁজে পাবেন নোয়াখাইল্যা। এই যে ধরেন বিশ্বের অন্যতম সুন্দরী নেত্রী খালেদা জিয়া, বিশ্বখ্যাত ডিগবাজ শিল্পী মওদুদ আহমেদ, মইন ইউ আহমেদ সহ অগণিত মানুষজন নোয়াখাইল্যা। আমাদের লুংগি দা ওরফে ফরহাদ মজহারও নোয়াখাইল্যা। ডাবল কোলা, ইউরো কোলা’র বাড়িও নোয়াখালী। পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য হাশেম এর কথা মনে আছে। উনাকে সংসদ থেকে কয়েকমাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিলো। উনি মাননীয় স্পীকারকে বারবার মাননীয় সাংসদ বলেছিলেন। নোয়াখালী ৪ আসনের বর্তমান এমপি একরামুল করিম চৌধুরী সংসদে বলেছিলেন “আমাকে সব কিছু নগদ নগদ দিয়ে দিতে হবে। মা বাবা নাম রেখেছেন একরাম চৌধুরী। পাবলিক আমারে কয় নগদ চৌধুরী। কারণ আমার সব নগদ কাজ কারবার।” এরপর কিছুদিন সংসদে না আসার জন্য বলেছিলেন স্পীকার। এতোকিছুর পরও বলি Man is Abul – মানুষ মাত্রই ভুল। ভুলকে ক্ষমা করে দিতে হয়।
যোগাযোগ মন্ত্রীর নাম সৈয়দ আবুল হোসেন হয়েই বিপদ হলো। উনার নাম যদি সৈয়দ আশরাফ হতো, তবে কি আর আমরা এভাবে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে পারতাম। এই যে সৈয়দ আশরাফ লন্ডন, ম্যানিলা শহরকে ভাগ করার মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদেরকে আবুল বানানোর চেষ্টা করেছেন, আমরাতো উনাকে “আবুল” “আবুল” বলে ক্ষ্যাপাতে পারছি না। এজন্যই বলি, নামে কী আসে যায়। দেশে এখন আবুলের চাষ চলতেছে। প্রচুর হাইব্রিড আবুল উৎপাদন হচ্ছে। বেশি আবুল আবুল করা এজন্যই ঠিক না।